অনেক দিন আগের কথা।
কিশোর শরীফ তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র।
শরীফের বাবা ও মায়ের মধ্যে খুব বড়ো আকারের ঝগড়াঝাটি হয়েছে।
স্কুলে যাবার সময় হয়েছে। বাবা রেগে হোন্ডা বাইক নিয়ে শহরের দিকে ছুটলো।
যাবার সময় রাগান্বিত স্বরে বলে গেলো, শরীফের মা’কে ডিভোর্স দিবে।
শরীফ সেদিন খুবই চিন্তিত, স্কুলে যাবে নাকি বাবার পিছনে ছুটবে? বাবা কি সত্যিই ওর মা’কে ডিভোর্স দিবে?
তাহলে কি উপায় হবে? ছোটো চারটি ভাইবোন নিয়ে শরীফদের সংসার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
মা’কে কিছু জিজ্ঞাসা করবে, পাবে কোথায়? বাবার হাতে মার খাবার ভয়ে অন্য কোনো বাড়িতে লুকিয়েছে তিনি।
কিশোর শরীফ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা, এখন সে কি করবে।
এক পর্যায়ে স্থির করে ফেললো, সবচেয়ে বিশ্বস্ত বাবা সমতুল্য মানুষ হাশেম জোয়াদ্দের কাছে যাই।
হাশেম জোয়ার্দার একজন জ্ঞানী মানুষ। দৌড়ে মুদীখানার দোকানী হাশেম চাচার কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বললো।
তিনি বললেন, তোমার বাবাকে বিশ্বাস নেই, ডিভোর্স দিতেও পারে।
বেশ কিছুদিন ধরেই ডিভোর্স দিবে বলে আল্টিমেটাম দিয়ে আসছিল শরীফের বাবা। হাশেম চাচা বিষয়টি শুনেছে।
এবার হাশেম চাচা শরীফকে পরামর্শ দিলো, তুমি কোর্টে চলে যাও এবং যেভাবেই হোক,
বাবাকে বোঝাও, তোমার মুখের পানে চেয়ে তিনি সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।
শরীফদের বাসা থেকে কুষ্টিয়া কোর্টের দূরত্ব প্রায় পাঁচ মাইল।
তখনকার সময়ে মাইলের হিসাব ছিলো। একমাইল অর্থাৎ ১৭৬০ গজ।
শরীফের চোখে বিন্দু বিন্দু জল। সকালের নাস্তা করা হয়নি।
ক্ষুদা পেটে খুব দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো। দ্রুত যেতে হবে, তাই দৌড়াতেও দ্বিধা হচ্ছেনা।
পাগলের মতো কিছুটা দৌড় আবার জোরপায়ে হাঁটা, এভাবে পৌঁছে গেলো কোর্টের বারান্দায়।
এখন আর শরীফের চোখে বিন্দু বিন্দু জল নয়, ঝর ঝর করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
কালো কোর্ট পরিহিত উকিল সাহেবদের দেখলেই কান্না বিজড়িত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে চলেছে –
” আংকেল, আমার আব্বুকে দেখেছেন? ” কেউ বলছে চিনিনা, দেখিনি, অন্য কোথাও খুঁজো।
শরীফের বড়ো খালুজান, কুষ্টিয়া কোর্টে পেশকারের চাকুরী করতো।
উঁকি ঝুঁকি দিয়ে খুজতে খুজতে খালুজানের সাথে দেখা হয়ে গেলো।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে খালুজানকে জানালো, যে বাবা তার মা’কে ডিভোর্স দিতে কোর্টে এসেছে।
খালুজান আশ্বস্ত করলো ” তুমি কেঁদোনা, আমি দেখছি, এসো আমার সাথে “।
ইতিমধ্যে সেই আমলের টাইপ মেশিনে ডিভোর্স পেপার লেখা হয়ে গেছে। একজন উকিলের হাতে কাগজটি।
সাথে শরীফের বাবা রাগান্বিত মেজাজে উকিলের চেম্বারে বসে আছে।
খালুজান উকিল সাহেবের সামনে শরীফকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
উকিল সাহেব শরীফকে কিছু প্রশ্ন করতে, শরীফ কান্না মিশ্রিত কন্ঠে উত্তর দিয়ে চললো।
এরমধ্যে, উকিলের চেম্বারে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে, কয়েকজন উকিল এবং মহুরি এসেও হাজির।
সবাই কিশোর শরীফের কান্না ও কথায় আবেগ তাড়িত হয়ে উঠেছে।শরীফের হয়ে প্রতিটি মানুষই শরীফের বাবাকে বোঝাতে শুরু করলো।
একপর্যায় নির্ধারিত উকিল সাহেব, নিজেই বলে ফেললেন,
” এই মাসুম বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে আপনার সিদ্ধান্ত বদল করুন, তাছাড়া আমি পারবো না, এই ডিভোর্স পেপার নিয়ে ওকালতি করতে।
শুনেছি উকিল সাহেবরা নাকি শুধু ব্যবসাই করে, সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে উপস্থাপন করেন।
কিন্তু না, উকিল সাহেবরা যা করলো, শরীফের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকলো।
একজন সিনিয়র উকিল ডিভোর্স পেপারটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে, ময়লার ঝুড়িতে ফেলো দিলো।
শরীফের বাবা নিস্তব্ধ হয়ে একটি চেয়ারে বসে আছে। শরীফ বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো ” বাসায় চলো আব্বু,আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে “।
শরীফের বাবা শরীফকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে আদর করে নিজেও কেঁদে ফেললো।
জিগালো, তুমি এতো তাড়াতাড়ি এখানে কিভাবে এলে?
উত্তরে শরীফ বললো দৌড়াতে দৌড়াতে এসেছি। ততক্ষণে অনেক ভীড় জমে গেছে আদালত চত্বরে।
রক্ষা পেলো শরীফদের সাজানো গোছানো সংসার।
শরীফের বাবা শরীফকে নিয়ে, হোন্ডা বাইকে চড়িয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
কিছুদূর এসে একটা হোটেলে বসে বাপবেটা নাস্তা সেরে নিলো।
এমন শতেক ঘটনা আর বাবা মায়ের মতবিরোধ মোকাবিলা করতে করতে শরীফ কিশোরকাল কেটেছে।
যৌবনে এমনকি নিজ সংসার জীবনে এসেও কর্তব্য পালন করে চলাটা যেন তার নৈতিক দায়িত্ব।
সমাজে এমন শরীফেরা জন্মে বোধহয় সংসার গড়তে, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে,
এবং কষ্টের মহাসাগর পাড়ি দিয়ে, গন্তব্যহীন পথের শেষপ্রান্ত খুঁজে ফিরতে,আজও তার জীবন সংগ্রাম চলমান।
আরও পড়ুন
see more and read more
Do you love to read stories?
Do you want to live longer in a healthy body?
Then stay with this website.
Read poetry, stories and health awareness articles regularly.
Please Subscribe to our website today. Best wishes to you.
Hello. impressive job. I did not anticipate this. This is a splendid story. Thanks!