প্রতিটি মানুষের জীবন ঘিরে তার জন্মদাতা বাবার দ্বারা থাকে অজস্র অবদান।
আমার বাবা ছিলেন একজন সৎ যোগ্য এবং নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ।
এছাড়াও তিনি ছিলেন বিচক্ষণ এবং নানামুখী প্রতিভাবান।
বাবার ইংংরেজি এবং বাংলা হাতের লেখা ছিলো খুবই সুন্দর।
বাবার একটা বিশেষ প্রতিভা ছিলো, তা হলো পাতা দিয়ে মধুর সুরে বাঁশি বাজাতে পারতেন।
অসংখ্য গান লিখেছেন তিনি। নিজেই সুর করতেন এবং হারমনি বাজিয়ে গান গেতেন।
যেকোনো কালচারাল প্রোগ্রামে উপস্থাপনায় ছিলো তার আলাদা পারদর্শীতা এবং শ্রুতি মধুরতা।
তিনি ধর্ম চর্চা কর্তেন এছাড়াও ধর্ম বিষয়ে পুস্তিকা রচনা করেছেন।
গত ৪ নভেম্বর সোমবার সকাল ৮ ঘটিকায়, বাংলাদেশের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পরলোকগমন কালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮২ বৎসর।
বাবার এই চলে যাওয়া, আমাকে নানাভাবে ব্যথিত করেছে। কখনও একাকী নীরবে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা।
আমার বাবা মানেই, আমার জীবনের প্রতিটি শিক্ষা ও সফলতার কেন্দ্রবিন্দু।
অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বাবাকে ঘিরে, তার অধিকাংশই শিক্ষনীয় এবং আদর্শিক।
আমার বাবা কুষ্টিয়া জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডে সরকারি চাকুরী করতেন।
সেই সুবাধে আমি আমার পরিবার সহ কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলায় পাহাড়পুর সরকারি কোয়াটারে বসবাস করতাম।
আমাদের বাসার সামনেই ওয়াপদার ক্যানেল। ক্যানেলে শান বাধানো ঘাট ছিলো।
এটা আমার বাবার উদ্যোগে তাঁর উর্ধতন অফিসারের সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছিলো।
আমরা সহ স্থানীয় অনেকেই এ-ই ঘাটে গোছল করতাম।
একদিন সকালবেলা, বাবা অফিস যাওয়ার প্রাক্কালে ঘাটে গোছল করে বাসায় ফিরলেন।
আমি তখন পড়ার টেবিলে গুণগুণ করছি। বাবা শুকনো কাপড় পড়ে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
তার খেয়াল ও নজর ক্যানেলের শান বাধানো ঘাটের দিকে।
মা খাবার সাধছে, বাবা উত্তর দিচ্ছে একটু পরে। বাবার এই আচরণ দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।
বরাবরই যে কোনো বিষয়ে জানার কৌতূহল আমার বেশী।
আমি আগ্রহ সহকারে খুব খেয়াল করছি, বাবার এই অদ্ভুত আচরণকে।
কিছুক্ষণ পর দেখি, অলোক নামের এক চাচা শান বাধানো ঘাটের আশেপাশে কিছু একটা খুঁজছে।
বাবা এবার বাসার বারান্দা ছেড়ে ঘাটের দিকে এগিয়ে গেলেন। অলোক কাকাকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় ফিরলেন।
তারপর, একটা মোটা উন্নত সোনার আংটি অলোক কাকাকে হাতে দিয়ে বললেন, দ্যাখোতো এটাই কিনা?
অলোক কাকা স্নান করতে গিয়ে ঘাটে আংটিটা ফেলে এসেছিল।
অলোক কাকার চোখে মুখে চরম আনন্দের ছাপ।
এই দৃশ্যটা আজ ৫০ বৎসর পরেও আমাকে গর্বিত করে।
এমন হাজারো স্মৃতি আছে আমার বাবার কর্মের মাঝে। যাহা বংশানুগত রক্তধারায় একজন সন্তানকে আদর্শবান হতে শিখায়।
আমার বাবার নাম এ,এস,এম মজিবর রহমান।
দাদু সামসুর রহমান মিয়া ( সাবেক চেয়ারম্যান, জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ, রাজবাড়ী) ।
মহান সৃষ্টিকর্তা যেনো আমার বাবার বিদেহী আত্মাকে বেহেশতে নসীব করেন ( আমিন) ।
আরও পড়ুন
কুদরত রাহমান এর কবিতা / যদি কবিতা পড়ো
See more and read
1 Comment